Breaking News
Loading...

খিলাফতের মৃত্যু ও সৌদি রাজতন্ত্রের জন্ম হল যেভাবে

2:45 AM
بِسْــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ الرَّحِيم

সৌদি আরব হলো কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীরর একমাত্রমুসলিম দেশ। অন্য কোনো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়নি ।
রিয়াদের নিকটস্থ দিরিয়া নামের একটি কৃষি বসতির প্রধান
ছিলেন মুহাম্মদ বিন সৌদ। এই উচ্চাভিলাষী মরুযোদ্ধা ১৭৪৪ সালে আরবের বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ বিন ওয়াহাব [ওয়াহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা]- এর সাথে মৈত্রী চুক্তি করে “দিরিয়া আমির গঠন করেন।

তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে এই দুজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। ওই “দিরিয়া আমিরাত”-ই বিশ্বের প্রথম সৌদি রাজ্য/আমিরাত।মুহাম্মদ বিন সৌদ তার পুত্র আবদুল আজিজের সাথে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মেয়ের বিয়ে দেন।এভাবেই সৌদ পরিবার ওয়াহাবী মতবাদের মিলনযাত্রা শুরু হয়।
১৭৬৫ সালে মুহাম্মদ বিন সৌদ-এর মৃত্যু হলে তার ছেলে আবদুল আজিজ দিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হয়।এই আবদুল আজিজ তত্কালীন বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল ব্রিটেনের সাথে হাত মিলিয়ে তুরস্কের খলিফাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে থাকে। শ্বশুর ইবনে ওয়াহাবের ধর্মীয় মতবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ব্রিটিশদের সাথে নিয়ে তুর্কি খিলাফত ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হয় আবদুল আজিজ।

১৭৯২ সালে মুহাম্মদ বিনওয়াহাবের মৃত্যু হয়। ১৮০১/২ সালে আবদুল আজিজ তুর্কি খিলাফতের কাছ থেকে ইরাক দখল করে হজরত আলী (রা.) ও হজরত হুসেন (রা.)- এর মাজার ভেঙে ফেলে। এর প্রেক্ষিতে ১৮০৩ সালে একজন শিয়া মুসলিম আজিজকে দিরিয়ায় আসরের নামাজরত অবস্থায় হত্যা করে।
এর পর আবদুল আজিজের ছেলে সৌদ বিন আবদুল আজিজ ক্ষমতায় এসে তুর্কিদের পরাজিত করে ১৮০৩ সালে মক্কা ও ১৮০৪ সালে মদিনা দখল করে নেয়।দুই পবিত্র নগরী দখল করে তারা ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়।তারা মক্কা-মদিনার বহু মুসলিমকে হত্যা করে। এসবই চলে ব্রিটিশদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা নিয়ে।

ইরাক-মক্কা-মদিনায় সৌদিদের এই ধ্বংসযজ্ঞে তত্কালীন তুর্কি খলিফাগণ ভীষণ রুষ্ট হন। ১৮০৮ সালে খলিফা ২য় মাহমুদ ক্ষমতাসীন হয়ে সৌদিদের দমনে শক্তিশালী সেনাদল পাঠান।ব্রিটিশ বাবারা এবার আর সৌদিদের বাঁচাতে পারেনি। ১৮১৮ সালে সৌদের ছেলে, তত্কালীন সৌদি শাসক আবদুল্লাহ বিন সৌদ তুর্কিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।আবদুল্লাহ বিন সৌদকে বন্দী করে ইস্তাম্বুলে নিয়ে যা দুই পবিত্র নগরী ও বহু মসজিদ ধ্বংসের শাস্তি হিসেবে খলিফা ২য় মাহমুদ-এর নির্দেশে আবদুল্লাহ বিন সৌদ ও তার দুই ছেলেকে ইস্তাম্বুলে প্রকাশ্যে শিরচ্ছে করা হয়।এভাবেই প্রথম সৌদি আমিরাত (১৭৪৪-১৮১৮)-এর পতন হয় ও পবিত্র মক্কা-মদিনাসহ আরবে উসমানিয়া খিলাফতের শাসনকর্তৃত্ব ফিরে আসে।

সৌদ পরিবারের দিরিয়ার আখড়া ১৮১৮ সালে ধ্বংস হয়ে গেলে প্রথম সৌদি আমিরাতের শেষ আমীর আবদুল্লাহর তুর্কি নামের এক পুত্র মরুভূমিতে পালিয়ে যায়। এই তুর্কি বিন আবদুল্লাহ পালিয়ে বনু তামিম গোত্রে আশ্রয় নেয়।পরে ১৮২১ সালে সে আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসে উসমানিয়া খিলাফ বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।১৮২৪ সালে তুর্কি বিন আবদুল্লাহ উসমানিয়াদের নিয়োজিত মিশরীয়দের হটিয়ে দিরিয়া ও রিয়াদ দখল করে নেয়।

রিয়াদকে রাজধানী করে গঠিত এই “নজদ আমিরাত” ইতিহাসে দ্বিতীয়সৌদি রাজ্য নামে পরিচিত। দ্বিতীয় সৌদি রাজ্যটি অবশ্য খুব কম এলাকাই দখলে নিতে পেরেছিল। এটি বেশিদিন টিকেওনি। এই নজদ আমিরাতের প্রধানকে “ইমাম”বলা হত এবং ওয়াহাবী মতাবলম্বীরাই ধর্মীয় বিষয়ে কর্তৃত্বশীল ছিল।তবে এবার সৌদ পরিবারে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কথিত ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহকে তাঁর এক জ্ঞাতি ভাই মুশারি বিন আবদুর রহমান বিদ্রোহ করে ১৮৩৪ সালে হত্যা করে।তবে ক্ষমতা পায়নি মুশারি।

তুর্কির ছেলে ফয়সাল এরপর নজদ আমিরাতের ইমাম হয়। সৌদ পরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে। অবশেষে ১৮৯১ সালে মুলায়দার যুদ্ধে উসমানিয়াদের অনুগত রাশিদী বাহিনীর হাতে দ্বিতীয় সৌদি আমিরাতের পতন ঘটে।সৌদিদের শেষ ইমামআবদুর রহমান বিন ফয়সাল তার সাঙ্গোপাঙ্গসহ পালিয়ে যায়।আবদুর রহমান বিন ফয়সাল বিশাল বালুকাময় রুব আল খালি মরুভূমি পাড়ি দিয়ে আবদুর রহমান তার পুত্র আবদুল আজিজকে [একে মনে রাখুন -পরবর্তী গাদ্দার] নিয়ে দক্ষিণপূর্বে মুররাবেদুইন গোত্রে গিয়ে পালায়।
সেখান থেকে তারা বাহরাইনের রাজপরিবারের কাছে গিয়ে কিছুদিন আশ্রয় নেয়।

তার পর ১৮৯৩ সালে আবদুর রহমান ও তার পুত্র শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ দালাল কুয়েতি আল-সাবাহ রাজপরিবারের আশ্রয় পায়। কুয়েতি রাজপরিবারের সহায়তায় সৌদিরা উসমানিয়া খিলাফতের কর্তৃত্বাধীন নজদে একের পর এক চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে থাকে। কিন্তু এসব হামলায় সৌদিরা তেমন কোনো বড় সাফল্য পায়নি।১৯০১ সালে সারিফের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আবদুর রহমান তার হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের সব উদ্যম হারায়। ১৮৯৯ সালের জানুয়ারিতে কুয়েতের আমির মুবারক আল সাবাহ ব্রিটেনের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে কুয়ে করদরাজ্য (Protectorate)- এ পরিণত করেন।

তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের প্রভাবের বিরুদ্ধেই কুয়েত এই চুক্তি করে ব্রিটেনের সাথে। সৌদ পরিবারের লড়াইটিও ছিল উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধেই। তাই ১৯০১ সালে সারিফের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে পিতা আবদুর রহমান হতোদ্যম হলেও পুত্র আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ আবারও আশার আলো দেখে।আবদুল আজিজ ইবনেসৌদ ১৯০১ সালের শেষের দিকে কুয়েতের আমির মুবারকের কাছে উসমানিয়াদের নিয়ন্ত্রিত রিয়াদ আক্রমণের জন্য সাহায্য চায়।ব্রিটিশ মদদপুষ্ট কুয়েত সানন্দে ইবনে সৌদকে ঘোড়া ও অস্ত্র সরবরাহ করে।



বর্তমান সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা ১৯০২ সালের ১৩ জানুয়ারি ইবনে সৌদ সৈন্যসহ রিয়াদের মাসমাক দুর্গ আক্রমণ করে। মাসমাকের উসমানিয়া অনুগত রাশিদী প্রশাসক ইবনে আজলানকে হত্যা করে সৌদিরা।ইবনে সৌদ যুদ্ধজয় শেষে ইবনে আজলানের ছিন্নমস্তকটি নিয়ে দুর্গ শীর্ষে আসে এব উদ্বিগ্ন রিয়াদবাসীর দিকে ছুঁড়ে মারে।(https://en.wikipedia.o/rg/wiki/Battle_of_Riyadh_(1902)

আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের রিয়াদ আমিরাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাসে তৃতীয় সৌদি রাজ্যের সূচনা হয়। এর পর সৌদিরা একে একে রাশিদীদের নজদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হটিয়ে দিতে থাকে। ১৯০৭ সালের মধ্যে সৌদিরা নজদের বিরাট এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়।

১৯০৯ সালে ব্রিটিশরা সামরিক অফিসার William Henry Irvine Shakespear-কে কুয়েতে নিয়োগ দিলে সৌদ পরিবার আরোশক্তিশালী হয়ে উঠে। শেক্সপিয়ারকে ইবনে সৌদ সামরিক উপদেষ্টা বানিয়ে নেয়।
https://en.wikipedia.o/rg/wiki/William_Henry_Irvine_Shakespear

১৯১৩ সালে সৌদিরা উসমানিয়া সৈন্যদের কাছ থেকে পূর্ব আরবের গুরুত্বপূর্ণ মরুদ্যান হাসা শহর দখল করে নেয়। এরপর পার্শ্ববর্তী কাতিফ শহরও সৌদিরা দখলে নেয়।পরের বছর ১৯১৪ সালে বিশ্বজুড়ে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।ব্রিটেন-ফ্রান্স -রাশিয়ার মিত্রশক্তি জার্মানি-উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
রিয়াদে ব্রিটিশরা শেক্সপিয়ারের মাধ্যমে সৌদিদের সাথে উসমানিয়া অনুগত রাশিদীদের যুদ্ধ লাগায়। https://en.wikipedia.o/rg/wiki/Battle_of_Jarrab

১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে সংঘটিত এই যুদ্ধে রাশিদীরা জয়ী হয় ও শেক্সপিয়ারকে হত্যা করে।রাশিদীরা শেক্সপিয়ারের শিরশ্ছেদ করে ও তার হেলমেট উসমানিয়াদ ের কাছে হস্তান্তর করে।উসমানিয়ারা সৌদিদের সাথে ব্রিটিশদের সম্পর্কের প্রমাণস্বরূপ শেক্সপিয়ারের হেলমেট মদিনার প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেখায়।

শেক্সপিয়ারকে হারিয়ে বিপর্যস্ত ইবনে সৌদ ১৯১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশদের সাথে দারিন চুক্তি স্বাক্ষর করে। ব্রিটিশদের পক্ষে ব্রিটেনের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান মেজর জেনারেল স্যার পার্সি কক্স ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি মোতাবেক সৌদি রাজত্ব ব্রিটিশদের করদরাজ্য (Protectorate)- এ পরিণত হয়। https://en.wikipedia.o/rg/wiki/Treaty_of_Darin

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন-ফ্রান্স - রাশিয়ার মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে জার্মান-উসমানিয়া খিলাফতের দুর্বল অবস্থা ও আল-সৌদ পরিবারের সাথে ব্রিটিশদের সখ্য দেখে চিন্তিত হয়ে ওঠেন মক্কার উসমানিয়া সমর্থিত শাসক হুসাইন বিন আলী।১৯১৫ সালের ১৪ জুলাই থেকে হুসাইন মিশরের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার হেনরি ম্যাকম্যাহনের গোপনে পত্রযোগাযোগ শুরু করেন। ৩০ জানুয়ারি ১৯১৬ পর্যন্ত এই পত্র আদান-প্রদান চলতে থাকে।উসমানিয়া খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত বিশাল আরব ভূ-খণ্ডের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা মতবিনিময় করে।
https://en.wikipedia.o/rg/wiki/Hussein-McMahon_Correspondence

ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মদদে মক্কার শাসক সেই হুসাইন বিন আলী উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহ তৈরি করে। ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্সের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় বিশ্বাসঘাতক হুসাইন মিডল-ইস্টার্ন ফ্রন্টে উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শুরু করলে বহু উসমানিয়া সৈন্য বন্দী হয় ও অবশেষে উসমানিয়ারা ১ম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হয়।ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্স – আরববিশ্বে আরব জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা– হলিউডের বিখ্যাত “Lawrence of Arabia” (১৯৬২) মুভিটি একে নিয়েই নির্মিত ১৩০০ বছর পর মধ্যপ্রাচ্য মুসলিম খিলাফতের হাতছাড়া হয়ে যায়।

পুরস্কার হিসেবে ব্রিটিশরা ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর হুসাইন বিন আলীর দ্বিতীয় ছেলে আব্দুল্লাহকে জর্ডানের রাজত্ব ও তৃতীয় ছেলে ফয়সালকে ইরাকের রাজত্ব দেয়।হুসাইনকে রাখা হয় হেজাজ (পবিত্র মক্কা-মদিনা ও তাবুক অঞ্চল)-এর শাসক হিসেবে।এভাবে ১ম বিশ্বযুদ্ধ আল-সৌদ পরিবারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে।কেননা ব্রিটিশদের পা-চাটার ক্ষেত্রে তাদের প্রতিপক্ষ হুসাইন পরিবার এগিয়ে যায় এবং যুদ্ধ শেষে হুসাইন ও তার দুই ছেলে মিলে তিন দেশের রাজত্ব পায়।

তবে নজদ(রিয়াদ ও তদসংলগ্ন অঞ্চল)-এর শাসক সৌদিরাই থেকে যায়।দারিন চুক্তির আওতায় আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ব্রিটিশদের কাছ থেকে বহু অস্ত্র ও মাসে ৫,০০০ পাউন্ড ভাতা (দালালির পুরস্কার) পেতে থাকে। তথ্যসূত্র: Abdullah Mohammad Sindi, “TheDirect Instruments ofWestern Control over the Arabs: The Shining Example of the House of Saud”

যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা ইবনে সৌদকে ১ম বিশ্বযুদ্ধের উদ্বৃত্ত বিপুল গোলাবারুদ দিয়ে দেয়। ওই ব্রিটিশ অস্ত্র ও গোলাবারুদের সম্ভার নিয়ে সৌদিরা ক্রমধ্বংসমান উসমানিয়া খিলাফতের অনুগত রাশিদীদের ওপর দক্ষিণ-পশ্চিম আরব অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে।১৯২০থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত লড়ে রাশিদীরা শেষ পর্যন্ত সৌদিদের হাতে পুরোপুরি পরাজিত হয়।ফলে আরবে আল-সৌদ পরিবার নিয়ন্ত্রিত ভূ-খণ্ডের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত Percy Cox-এরমধ্যস্থতায় ১৯২২ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত Uqair Protocol-এর আওতায় ওই বিশাল অঞ্চলে সৌদি রাজত্ব স্বীকৃতি লাভ করে। http://en.wikipedia.or/g/wiki/Uqair_Protocol_ of_1922

এ-সময় পর্যন্ত আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ কখনোই ব্রিটিশ অনুগত হেজাজের শাসক হুসাইনের সাথে সংঘাতে জড়ায়নি।
১৯২৪ সালের ৩ মার্চ আরেক ব্রিটিশ দালাল মুস্তাফা কামাল পাশা তুরস্কে অফিসিয়ালি খিলাফত বিলুপ্তকরে। সারা বিশ্বের মুসলিমদের সাথে মক্কার হুসাইন বিন আলীও মহানবী (সা.) আমল থেকে ১৩০০ বছর পর্যন্ত চলমান মুসলিমদের রাষ্ট্র খিলাফতের পতনে ব্যথিত হন।পৃথিবী থেকে খিলাফত মুছে গেছে, এটা হুসাইনের চেতনায় আঘাত করে।ব্রিটিশদের ক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা সত্ত্বেও ৫ মার্চ হুসাইন নিজেকে মুসলিমদের খলিফা ঘোষণা করেন।

ব্যস, এ-সুযোগটিই কাজে লাগায় খিলাফতের দীর্ঘদিনের শত্রু আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ। ব্রিটিশরা স্বাভাবিকভাবেই হুসাইনের নিজেকে খলিফা ঘোষণা করা মেনে নেয় শাসক হিসেবে হুসাইনের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ কালবিলম্ব না করে হেজাজ আক্রমণ করে এবং ১৯২৫ সালেরশেষ নাগাদ পুরো হেজাজ দখলে নিয়ে নেয়।
১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ মক্কা-মদিনা-জেদ্দার গোত্রীয় নেতাদের সমর্থনে নিজেকে হেজাজের “সুলতান” ঘোষণা করে। ১৯২৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ইবনে সৌদ আগের নজদ ও বর্তমান হেজাজ মিলিয়ে Kingdom of Nejd and Hejaz ঘোষণা করে। ৪ মাস পর সেই বছরের ২৭ মে জেদ্দা চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা Kingdom of Nejd and Hejaz-কে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
http://en.wikipedia.org/wiki/Treaty_of_Jeddah_(1927)#1927

নতুন জেদ্দা চুক্তি, ১৯২৭-এর মাধ্যমে ব্রিটিশ-সৌদের “Protectorate” স্ট্যাটাসের দারিন চুক্তি, ১৯১৫-এর সমাপ্তি ঘটে।পরবর্তী ৫ বছর আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ তার দুই রাজত্বকে আলাদা রেখেই শাসন করে। অবশেষে ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইবনে সৌদ তার দুই রাজত্বকে একত্রিত করে তার নিজের ও বংশের পদবি অনুসারে দেশের নাম “Kingdom of Saudi Arabia” (আরবি: المملكة العربية السعودية al-Mamlakah al-‘Arabiyyah as-Su‘ūdiyyah) ঘোষণা করে।এভাবেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উসমানিয়া খিলাফতবিরোধী নীতির প্রকাশ্য সমর্থক হিসেবে, পদে পদে ব্রিটিশদের মদদ নিয়ে, দালাল আল-সৌদ পরিবার ১৯৩২ সাল থেকে Kingdom of Saudi Arabia নামে মুসলিমদের পবিত্র ভূমি দখলে রেখে শাসন করে যাচ্ছে।

ব্রিটিশ রাজত্ব শেষ হওয়ার পর আমেরিকা পরাক্রমশালী হতে থাকে।সৌদি রাজারাও তাদের কিবলা পরিবর্তন করে আমেরিকার দিকে ঘুরাতে থাকে।



১৯৯০ সাল থেকে সৌদির পবিত্র ভুমিতে আমেরিকান ঘাটি রয়েছে।ইরাক যুদ্ধের সময় আমেরিকা এসকল ঘাটি থেকে ইরাকে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করে হাজার হাজার মুসলিম হত্যা করে।এরপরের ইতিহাস আপনাদের সকলেরই জানা।



ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِين

0 comments:

Post a Comment

 
Toggle Footer